১৯৬৬ সালের ৬ দফা কর্মসূচি ব্যাখ্যা কর! ছয় দফা গুলো কি কি?

১৯৬৬ সালের ৬ দফা কর্মসূচি ব্যাখ্যা কর! আর ১৯৬৬ সালের ছয় দফা কর্মসূচি, দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, বাংলাদেশের ভাগ্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

১৯৬৬ সালের ৬ দফা কর্মসূচি ব্যাখ্যা কর

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবিত, এই ছয়টি দাবি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বাঙালি জনগোষ্ঠীর জন্য স্বায়ত্তশাসন এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের পথের রূপরেখা দেয়।

এই নিবন্ধটি ছয়-দফা কর্মসূচি, এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং এই অঞ্চলে এর সুদূরপ্রসারী পরিণতির একটি বিস্তৃত ব্যাখ্যা প্রদান করতে চায়।

আর্থিক বিষয়ে স্বায়ত্তশাসন
ছয়-দফা কর্মসূচীর প্রথম দফাটি আর্থিক বিষয়ে স্বায়ত্তশাসন লাভের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। সেই সময়ে, পশ্চিম পাকিস্তান অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে আধিপত্য বিস্তার করেছিল, পূর্ব পাকিস্তানকে (বর্তমানে বাংলাদেশ) নিম্নবর্ণিত এবং অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর রেখেছিল।

এই দাবির লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভারসাম্যের প্রতিকার। অর্থনৈতিক শোষণ ও অবহেলার শিকার এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য এটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ
দ্বিতীয় দফায় পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীনভাবে বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনার কর্তৃত্বের আহ্বান জানানো হয়।

এই দাবির আগে, পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর একচেটিয়া অধিকার রেখেছিল, যা পূর্ব পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জড়িত হওয়ার ক্ষমতাকে সীমিত করেছিল।

বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান তার অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতার পথ প্রশস্ত করে।

আর্থিক স্বায়ত্তশাসন


তৃতীয় দাবিটি ছিল আর্থিক স্বায়ত্তশাসনকে কেন্দ্র করে। পূর্ব পাকিস্তান তার মুদ্রা ইস্যু করার, তার আর্থিক নীতি পরিচালনা এবং তার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার চেয়েছিল।

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এটি পূর্ব পাকিস্তানকে তার অর্থনীতির নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণের জন্য তার আর্থিক ব্যবস্থাকে টেইলার্জ করার অনুমতি দেয়।

সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণ
কর্মসূচির চতুর্থ দফায় পূর্ব পাকিস্তানে নিয়োজিত সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর ইস্যু ছিল। সেই সময়ে, পশ্চিম পাকিস্তানের পূর্বে একটি উল্লেখযোগ্য সামরিক উপস্থিতি ছিল, যাকে অনেকে সুরক্ষার উৎসের পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণের একটি হাতিয়ার হিসেবে মনে করত।

পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণের দাবির লক্ষ্য ছিল নিরাপত্তা বাহিনী তার আকাঙ্খা দমন করতে ব্যবহার না করে এই অঞ্চলের স্বার্থ রক্ষা করবে।

ফেডারেল সরকারে সমান প্রতিনিধিত্ব
পঞ্চম দাবিটি ছিল ফেডারেল সরকারে পূর্ব পাকিস্তানের সমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।

পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় অধিক জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও, পূর্ব পাকিস্তানে কম রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ছিল, যার ফলে নিম্ন-প্রতিনিধিত্ব এবং ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়। এই দাবি দেশের দুই শাখার মধ্যে রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিচ্ছেদ
ষষ্ঠ ও শেষ পয়েন্টে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে আলাদা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই সময়ে, পাকিস্তানের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রাথমিকভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল, যা পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আর্থিক নীতিতে বক্তব্য রাখাকে চ্যালেঞ্জ করে তুলেছিল।

রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে আলাদা করার মাধ্যমে, পূর্ব পাকিস্তানের নিজস্ব আর্থিক প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে, যাতে তার আর্থিক স্বার্থ আরও ভালভাবে পরিবেশিত হয়।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র অর্থনৈতিক রাজনৈতিক বৈষম্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ছয় দফা কর্মসূচির আবির্ভাব ঘটে।

পূর্ব পাকিস্তান, তার বৃহত্তর জনসংখ্যার সাথে, পাকিস্তানের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছিল, তবুও এটিকে পদ্ধতিগতভাবে প্রান্তিক করা হয়েছিল এবং জাতীয় সরকারে তাদের প্রতিনিধিত্ব করা হয়েছিল।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি প্রধানত পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাস করত, যার ফলে পূর্ব পাকিস্তানিদের মধ্যে অন্যায় ও অসমতার ক্রমবর্ধমান অনুভূতি হয়।

১৯৬০-এর দশকে পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণের আন্দোলন জোরদার হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ও তার ছয় দফা কর্মসূচির পেছনে রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজীবী ও নেতাকর্মীরা সমাবেশ করেন।

কর্মসূচিটি পূর্ব পাকিস্তানের অভিযোগের সমাধান এবং আরও ন্যায়সঙ্গত এবং ন্যায়সঙ্গত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সুস্পষ্ট এবং ব্যাপক কাঠামো প্রদান করে।

ফলাফল এবং উত্তরাধিকার

ছয় দফা কর্মসূচি পাকিস্তানের রাজনৈতিক পটভূমিতে এবং বাংলাদেশের জন্মের জন্য গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এটি বাঙালি জনগোষ্ঠীকে স্বায়ত্তশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ করে।

স্বায়ত্তশাসনের দাবি অবশেষে স্বাধীনতার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আন্দোলনে বিকশিত হয়, যা ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পরিণত হয়।

ছয় দফা কর্মসূচী দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের গতিপথ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল, যার ফলে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়।

স্বাধীনতা যুদ্ধের ফলে অসংখ্য প্রাণহানি এবং অপরিসীম দুর্ভোগ পোহাতে হয়, কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং একটি সার্বভৌম জাতির জন্মের লক্ষ্য অর্জন করে।

এই কর্মসূচির উত্তরাধিকার বাংলাদেশের নিজস্ব স্বতন্ত্র সংস্কৃতি, ভাষা এবং পরিচয় সহ একটি প্রাণবন্ত, স্বাধীন দেশ হিসাবে উত্থানের মধ্যে দেখা যায়।

এটি রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা প্রতিরোধ করার জন্য একটি জাতির মধ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বৈধ উদ্বেগ এবং আকাঙ্ক্ষাগুলিকে মোকাবেলার গুরুত্বের অনুস্মারক হিসাবেও কাজ করে।

উপসংহার

শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবিত ১৯৬৬ সালের ছয় দফা কর্মসূচি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে একটি টার্নিং পয়েন্ট। এটি পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসন, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার ন্যায্য অংশের জন্য বাঙালি জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে।

ছয় দফা কর্মসূচী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং শেষ পর্যন্ত একটি স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের মঞ্চ তৈরি করলেও, এটি একটি জাতির মধ্যে প্রান্তিক অঞ্চলের ক্ষোভের সমাধানের গুরুত্বের অনুস্মারক হিসেবেও কাজ করে।

এই কর্মসূচির উত্তরাধিকার দক্ষিণ এশিয়ার সামাজিক-রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ এবং ন্যায়বিচার ও আত্ম-নিয়ন্ত্রণের জন্য চলমান অন্বেষণকে রূপ দিতে চলেছে।

যুক্তফ্রন্ট কখন গঠিত হয়! যুক্তফ্রন্ট গঠনের রাজনৈতিক পটভূমি বিস্তারিত আলোচনা!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top